অং Bong চং - অথ বঙ্গ চলচ্চিত্র-মঞ্চ-সংগীত কথা ( পাঠ প্রতিক্রিয়া )
অং Bong চং - অথ বঙ্গ চলচ্চিত্র-মঞ্চ-সংগীত কথা
লেখক - ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়
প্রকাশক - উত্তরন পাবলিশার্স
মুদ্রিত মূল্য - ২৫০ টাকা।
--------------------------------------
সে এক সময় ছিল, যখন বাংলায় শিল্প-সংস্কৃতি আর বিনোদন হাত ধরাধরি করে পথ চলতো। ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায়ের লেখা 'অং Bong চং' বইটি আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সেই সব দিনে। পঁয়ত্রিশটি ছোট ছোট অধ্যায়ে ধরা রয়েছে সুন্দর এক রঙিন কোলাজ। বইটির মলাট বলছে তার ভাঁড়ারে রয়েছে চলচ্চিত্র, মঞ্চ আর সঙ্গীতের কথা। এই সবের সাথে সময়ের সেই সৃষ্টিশীল পর্যায়ে সাহিত্যের নিবিড় যোগের ইঙ্গিত মলাটে নেই। যদিও দুই মলাটের ভেতরে তা ভালোভাবেই আছে। সত্যজিতের বিভূতিভূষণ বা তপন সিংহের সাহিত্যিকসঙ্গ তো প্রসঙ্গত এসেছে, স্বাতন্ত্রেও আছেন শরদিন্দু, রমাপদ এবং আরণ্যকের বিভূতিভূষণ। 'মহানায়কের হিন্দি রিমেক' অধ্যায় তো আসলে বাংলা সাহিত্যের সেই সময়ের কথা, যখন হিন্দি চলচ্চিত্রকারেরা সিনেমার গল্পের জন্য বাংলার দিকে তাকাতেন প্রথমে। তখন লোকে ম্যাটিনি শোতে সিনেমা নয়, বই দেখতে যেত।বাড়তি পেয়ে উৎসাহিত বোধ করলাম।বুঝলাম এই বই শুধু নিছক বেডসাইড স্টোরি হিসাবে পড়তে গেলে ভুল করা হবে, আছে অনেক বেশি কিছু। আসলে কোলাজের একটা টুকরোর তেমন কোন নান্দনিক মূল্য নেই। সবটুকরো মিলে তৈরি হয় ছবিটা। এ বইতে আপাতবিচ্ছিন্ন অধ্যায়গুলো সব মিলে এক সম্পূর্ন ছবি, যেখানে লেখকের ভাবনা অবশ্যই পাঠককেও ভাবায়।
সিনেমা যেহেতু পরিচালকের শিল্পচিন্তার ফসল, এ বইতে বাংলা চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে প্রথমেই এসেছেন সত্যজিৎ , মৃনাল, ঋত্বিক , তপন।কে ক'টি অধ্যায়ে তা এখানে বলছি না।তুলনাবিচার না করে লেখক তথ্যের পশরা সাজিয়েছেন স্বাদু কলমে, তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ফুটপাথে হাঁটার চেষ্টা করেন নি।বইটির পাতাগুলো তাই ফুটনোটে কোমর ভাঙা নয় বরং মনোবিদের মত নানান আঙ্গিক থেকে বিষয়কে দেখা আর লেখা । সত্যজিৎ-মৃণালের সম্পর্কের দিগদর্শন নিয়ে 'রায়বাবু-সেনবাবু' এমন একটি অধ্যায় । পরের দিকে শিশিরকুমার -সৌমিত্রকে নিয়ে 'বড়োবাবু ও সৌমিত্র' প্রসঙ্গে রয়েছে সংযত আবেগের ছোঁওয়া।আবার 'মহানায়ক বনাম গুগাবাবা'তে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মূল্যবোধের টানাপোড়েন।
এ বইয়ের পর্বগুলি সিনেমা থেকে মঞ্চ, মঞ্চ থেকে গানে উত্তরিত হয়েছে সপ্রতিভ স্বাচ্ছন্দ্যে।ছবি বিশ্বাস, উত্তমকুমার সুচিত্রা থেকে প্রায় ভুলে যাওয়া সুপ্রভা বিনতা হয়ে অনায়াসে সামনে আসেন শিশির ভাদুড়ী, অজিতেশ অথবা হার্মনিক সলিল।খুঁটে নেওয়া সংগ্রহ আর গবেষণার মিশ্রনে অনিরুদ্ধ মননের এক মৌলিক দলিল।
সবটুকু বলে দেওয়া সম্ভব বা সমীচীন নয়।পাঠকের সামনে আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে, আকাশটা ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি, এটাই ভাল লেগেছে।
Comments
Post a Comment